
<
দ্বিতীয় অভিযোগ: হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। এর আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন: ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েন চেয়ে সেনাসদরে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি
তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে হত্যার আগুনে পোড়ানোর ঘটনায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন।
রায়ের তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন কর্মসূচি’ ঘিরে রাজধানীতে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ-বাসে অগ্নিসংযোগ চলছে। সর্বশেষ রাজধানীতে ১৩টির মতো বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া আতঙ্ক ছড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। পুলিশ বলছে, ঢাকার বাইরে থেকে এসে এসব নাশকতা করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে এসব কাজে ভাড়ায় লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ: একনজরে শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির বিচার প্রক্রিয়া
এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঢাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে, ডিএমপির ৫০টি থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যের পাশাপাশি বুধবার ভোর থেকে হাইকোর্ট এলাকা, বাংলা একাডেমি, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় বিজিবি সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে, তবে রাজধানীতে শঙ্কার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
লকডাউন এবং জ্বালাও-পোড়ােয়ের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েনের চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনালের অফিস থেকে সেনা সদর দফতরে আজ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘রায়ের দিন নির্ধারণের এখতিয়ার পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আগামীকাল রায়ের ডেট আমরা পাবো।’
রায়ের তারিখ ঘিরে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি থ্রেট টু জাস্টিস মনে করছি না। তারা এ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে এগুলো করছে।’
আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি নিয়ে বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী রেসে নেই, তাদের নেত্রীও নেই সুতরাং তাদের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কনসার্নে থাকার মতোই বিষয়। বাহিনীগুলো কঠোর অবস্থানে থাকবে এটাই প্রত্যাশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়াও যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শক্ত অবস্থান নিতে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রেলপথের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। এনসিপির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই আওয়ামী লীগ দেখবেন, আওয়ামী লীগের আগুন–সন্ত্রাস দেখবেন বা জনগণের ক্ষতি করার পরিকল্পনা দেখবেন, তাদের ধরে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধে আট দল সরকারের পাশে থাকতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াত কর্মীরা ১৩ নভেম্বর মাঠে থাকবে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের যেকোনো নাশকতা রুখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আর বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে পরাজিত শক্তির কোনো ঠাঁই হবে না জানিয়ে তাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি আরও বলেন, লাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদল ৭২ এর বাকশালপন্থি, অন্য দল ২৪ এর জুলাইপন্থি। ২৪ এর পরাজিত শক্তিরা ১৩ নভেম্বর যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বাকশালপন্থিদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে জুলাইপন্থিরা।
এছাড়া জুলাই আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।
]]>
Source link






















আপনার মতামত লিখুন :